কত শত বছর ধরে শুনে আসছি—বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে গেলেই নাকি জাহাজ উধাও, বিমান নিখোঁজ! কখনো বলা হয়, সমুদ্রের নিচে কোনো অদৃশ্য শক্তি আছে, আবার কখনো ভিনগ্রহবাসীকে দায়ী করা হয়। সত্যি বলতে, এই রহস্যময় সমুদ্র এলাকা নিয়ে যতটা গল্প হয়েছে, বিজ্ঞানের তথ্য ততটা ঠাণ্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করেছে।
আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কোথায়?
আটলান্টিক মহাসাগরের মায়ামি, বারমুডা আর পুয়ের্তো রিকো মিলে তৈরি এক বিশালাকার ত্রিভুজ। এটাই বিখ্যাত “বারমুডা ট্রায়াঙ্গল”। এখানেই ঘটে গেছে কিছু আলোচিত দুর্ঘটনা—যেমন ১৯৪৫ সালের Flight 19 বা ১৯১৮ সালের USS Cyclops নিখোঁজ হওয়া। এগুলোই রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে।
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা কী বলছে?
অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী কার্ল ক্রুসজেলনিকিসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন—
-
এখানে দুর্ঘটনা যতটা ঘটে, পৃথিবীর অন্য ব্যস্ত সমুদ্রপথেও ততটাই ঘটে। পার্থক্য শুধু একটাই: বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বেশি গল্প বানানো হয়।
-
এ অঞ্চল দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর জাহাজ ও বিমান যায়। যানবাহন বেশি হলে দুর্ঘটনাও তুলনামূলকভাবে বেশি হবে—এটা খুবই স্বাভাবিক।
-
প্রকৃত সমস্যাগুলো হচ্ছে আকস্মিক ঝড়, শক্তিশালী গালফ স্ট্রিম, প্রবালপ্রাচীর, অগভীর জল আর দ্বীপের ভিড়। এর ফলে জাহাজ পথ হারায় বা ডুবে যায়।
-
কিছু এলাকায় চৌম্বকীয় অস্বাভাবিকতার কারণে কম্পাস ভুল দিক দেখায়—যা নেভিগেশনে সমস্যা তৈরি করে।
তাহলে কি রহস্য মিথ্যে?
আসলে ‘অভিশপ্ত এলাকা’ বা ‘এলিয়েন পোর্টাল’ জাতীয় কাহিনিগুলো বই ও মিডিয়ার কল্যাণেই এত বিখ্যাত হয়েছে। লেখক ভিনসেন্ট গ্যাডিস প্রথম “বারমুডা ট্রায়াঙ্গল” শব্দটা চালু করেন ১৯৬৩ সালে। এরপর চার্লস বার্লিটজের বেস্টসেলার বই (১৯৭৪) পুরো ব্যাপারটাকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়।
কিন্তু বাস্তবে বিজ্ঞান বলছে—
এটা স্রেফ একটি ব্যস্ত নৌপথ যেখানে ঝড়-বৃষ্টি ও মানবিক ভুল মিলেই দুর্ঘটনা ঘটে। পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, এই এলাকার দুর্ঘটনার হার একেবারেই স্বাভাবিক।
তবুও কেন এত আলোচিত?
কারণ রহস্য মানেই কৌতূহল। জাহাজ হারিয়ে যাওয়া বা বিমানের রাডার থেকে উধাও হওয়ার গল্প শুনলেই মানুষের মনে ভয়, বিস্ময় আর কল্পনার জাল বুনে যায়। আর সেখানেই জন্ম নেয় রহস্যের বাজার।
✍️ শেষ কথা:
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ঘিরে যত গল্প-গুজব আছে, সেগুলো আসলে বেশি বিনোদনের খোরাক। বাস্তবে এখানে কোনো ভুতুড়ে শক্তি কাজ করছে না—কাজ করছে প্রকৃতি, পরিসংখ্যান আর মাঝে মাঝে মানবিক ভুল।
No comments:
Post a Comment
Thanks for comment stay with us.